|
আমি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এই কলাম-এর বীরদের ক্রমানুযায়ী সাজানো যেটা ১৯৭১-এর ১ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপ্রকাশিত তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে পরিকল্পিত। দু'লাইন বা দু'পৃষ্ঠা, দুর্ধর্ষ অথবা শান্তিপ্রবণ যারা গণমাধ্যমে কীর্তিত নয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রত্যাশার উদ্দীপিত হয়ে প্রতিরোধে ও শত্রুমুক্ত করতে অকুতোভয়ে লড়াই করছে তাদের ভাষায় তাদের কথা লেখা। শহীদের সত্য ইতিহাস সংগ্রহে সতর্কতা ছিল। আমরা এখনো পর্যন্ত কোন বইয়ের লেখা তুলে ধরিনি। তবে ওয়েবসাইট ঘাটা-ঘাটি করেছি, তথ্য যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য হলে সংগ্রহ করেছি। |
|
‘কুমিরার যুদ্ধ’
তথ্য সংগ্রহে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি - কৃতজ্ঞতা
বিরক্ত করেছি, করছি এবং করবো-আমার যে কোনো উপায়ে নেই। |
|
Honorable Headmaster Mohammad Abdullah Hill Mamun of Masjidda High School, Choto Kumira, Chittagong
|
Freedom Fighter Commander Nayek Shafi, Sitakund, Chittagong |
Freedom Fighter Kamal Uddin,
Choto Kumira, Chittagong |
Freedom Fighter Sarwar Kamal, Sitakund, Chittagong |
Freedom Fighter Bir Protik L. AC. Rustom Ali, Joramtol, Boro Kumira, Chittagong
|
Freedom Fighter Liaqat Ali, Joramtol, Boro Kumira, Chittagong. |
Freedom Fighter Mofizur Rahman, Boro Kumira, Chittagong |
Local Brave Co-Fighter Nabi, Joramtol, Boro Kumira, Chittagong |
Freedom Fighter Monu, Joramtal, Kumira, Chittagong |
Freedom Fighter Master Abul Kalam, Kumira, Chittagong |
Freeddom Fighter Fahim Uddin, Jharnapara, DT Road, Chittagong |
Freedom Fighter Nasir Uddin Nizami-Mirsharai, Chittagong |
|
|
|
|
|
৭১এর রক্ত রেখা
1971 martyrs Bloodlines and forgotten heroes of Bangladesh Liberation War
26 March 71 ambushed by the EPR and Bangali Soldiers at Kumira, Chittagong became the first successful fighting against the Paki 53 Brigade in the history of our liberation war |
Bijoy Sharony' at Sholoshahar, Chittagong, Bangladesh
|
Eye sketch of Ambush site of Kumira, Chittagong by the EPR and Bangali Soldiers-26 March 71 |
২৬ মার্চ ৭১ কুমিরার এমবুশ পাকি ৫৩ ব্রিগেডের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম সম্মুখ সফল যুদ্ধ । |
লিখছিলাম, আমার বাসার কাছেই ঈদগাঁহ কাঁচা রাস্তার মাথা থেকে কেন্দ্রীয় বেতার ভান্ডার পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরের প্রথম সফল এমবুশ ও সম্মুখ যুদ্ধ নিয়ে। যুদ্ধে শহীদ ৩ জন বাঙালী ইপিআর সদস্যের পরিচয় জোগাড় করে FBতে লিখতেই শ্রদ্ধেয় মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া বললেন: "যুদ্ধকথা" লিখতে। সর্বনাশা পরামর্শ। বাংলা লিখা মাত্র শিখছি গুগলে। লিখে কপি পেস্ট করি। আমার কাটখোট্টা মানসিকতার ফাক-ফোকর দিয়ে আর যাই হোক গুছিয়ে লেখা বের হবে না।
"যুদ্ধকথা" - কুমিরার এমবুশ পাকি ৫৩ ব্রিগেডের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম সম্মুখ সফল যুদ্ধ ।
প্রথম এমবুশ ও সম্মুখ যুদ্ধ সফলতার সঙ্গে হয়, ভুল তারিখ শুধরাবার জন্য আমাকে কুমিরার এমবুশ ও সম্মুখ যুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার চেষ্টায় মোবাইল-এ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলতে হয়েছে। আরো সঠিক তথ্যের জন্য আমি প্রথমবার ২৯ জানুয়ারী সকালে ছোট কুমিরা ও বড় কুমিরা জরিপ করি। দ্বিতীয়বার ৩ ফেব্রুয়ারী কস্টকর ৪ ঘন্টা অসমতল পথে ঘুরেছি। আবারো যেতে হবে একটা ট্রান্সপোর্ট নিয়ে, পাহাড়ের উপর টিবি হাসপাতালের কিছু অজানা তথ্য লিপিবদ্ধ ও ছবি তুলে নথিভুক্ত করা।
২৫ থেকে ২৮ মার্চ যা ঘটেছিলো তা' তারিখ ও সময় ক্রমানুসারে লিখবার চেষ্টা করছি:
◼ ২৫ মার্চ 'সোয়াত' জাহাজ থেকে খালাস করা চিটাগাং ক্যান্টনমেন্টগামী অস্ত্র ভর্তি ২টি ট্রাক বাঙালী ইপিআর দিক বদলে কুমিরা হাইস্কুল বিল্ডিংয়ের পেছনে পুকুর পাড়ে অস্ত্র খালাস করে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রাখে। পরে ছাত্র-জনতার মাঝে বিলি করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির পদক্ষেপ হিসাবে। তবে ট্রাক ২টায় অস্ত্ররের চেয়ে এমুনিশন বেশি ছিল, জানিয়েছেন এয়ারফোর্সের মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক মোঃ রুস্তম আলী।
◼ ২৬ মার্চ সকাল বড় কুমিরার জোরামতল বাসীদের জন্য ছিল অন্য রকমের। পূর্বের পাহাড়সারি সূর্যোদয় ক্ষণকাল আটকে রাখে। কিনতু সে'সকালে সূর্য উদয়হলো, জোরামতল বাসীদের অবাক করে দিয়ে একদল সূর্য-সন্তান উদয় হলো পাহাড়সারি ভেদ করে জোড়ামতল খালপাড়ের পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে, যেটা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসেছে। ক্লান্ত কিনতু উদ্দীপ্ত, প্রায় সবার হাথেই রাইফেল, ৩ টা LMG. কিছু গোলা-বারুদ। কিনতু পরনের পোশাক ছিল অপর্যাপ্ত, বেশির ভাগ বাঙালি সেনা (EBRC) লুঙ্গি, গেঞ্জি, শার্ট পরেই ক্যান্টনমেন্ট ছেড়েছে ২৫ মার্চ মধ্যে রাতে। স্থানীয় জনগণ তাদের ব্যবহৃত পোশাক - খাবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দ্রুত জোগাড় করে দেয়। কুমিরা হাইস্কুলে ঢুকেই তারা নিজেদের আর্মস রেডি করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। |
Captain Rafiqul Islam |
Captain Mohammad Shubid Ali Bhuiyan
|
ক্যাপ্টেন রফিক ৭০ জনের ইপিআর প্লাটুন সুবেদার মুসার নেতৃত্বে কুমিরা পাঠান ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়ার ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার দলটাকে ভারী করার জন্য। ইপিআর-এর দলকে কুমিরার ছাত্র-জনতা যোদ্ধারা দেখতে পায়নি। তবে দুপুরের পর ইপিআরদের আলাদা ৩টা LMG ও রাইফেল এম্বুশে অনেকজন এবং আশেপাশে বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায়, প্রতিটায় ৫-৬জনের গ্রুপকে প্রস্তুত থাকতে দেখেছেন স্থানীয় জনগণ। স্পটগুলো খুঁজে বেরকরে দেখাবার জন্য আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নবী ভাই। ৭১এর মার্চ মাসে সে কিশোর। কিনতু সাহসী ছিল। আমার ব্যাথায় জমে যাওয়া পায়ের ক্ষমতা যাচাই করার জন্য মাইলের পর মাইল হটিয়ে নিয়ে বেড়াল। আসল জায়গা থেকে অনেকটা উত্তরে চারদিকে খোলা জায়গার মাঝখানে একটা কালভার্ট দেখালো। ২৬ মার্চ বিকেলে কালভার্টের নিচে ৫-৬ জন ইপিআর পজিশন নিয়ে ছিল। হটাৎ সন্ধ্যার একটু আগেই একটা ফ্লেয়ার আকাশের দিকে উঠে গেলো। ইপিআর জোয়ানরা চিৎকার দিয়ে বললো, তোমরা পালাও, এখুনি গোলা-গুলি হবে এবং মুহুর্তেই শুরু হলো প্রচন্ড গুলিবর্ষণ।
◼ তারিখ ও সময় ক্রমানুসারে লিখবার চেষ্টা, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া ও ইপিআর প্রসঙ্গ চলে আসাতে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি। ২৫ মার্চের সন্ধ্যায় ● সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যদি শুভপুর ব্রীজ আংশিক ধ্বংস না করতেন তাহলে কুমিল্লা থেকে ২৫ মার্চ রাত ছুঁয়ে ২৬ মার্চ মধ্য রাতে রওনা হওয়া ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্ব ৫৩ ব্রিগেডের ৮০-১০০টির গাড়িবহর চট্টগ্রামে প্রবেশ করে ক্যান্টনমেন্ট, পোর্ট এলাকা, ইপিআর হেডকোয়ার্টার দখল করে পুরো চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করতো।
|
From WEB:
On March 25, the Pakistan army started for Chittagong from Comilla in 26 trucks. Engineer Mosharraf started preparations at 5 pm along with his associates to blow up the bridge.
Engineer Mosharraf said they first saw that there were some security guards on both sides of the bridge. They unarmed them and sprayed bitumen and kerosene on the wooden deck of the steel-frame bridge. Then they set fire to the bridge and it started burning in huge flames and sounds.
Though the bridge could not be blown up for want of explosives, it became inoperative. |
Freedom Fighter Engineer Mosharraf Hossain |
কুমিল্লা থেকে শুভপুর পর্যন্ত যাত্রাটা ৫৩ ব্রিগেডের জন্য সুখকর ছিল না। স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা-যোদ্ধা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল ইট পাথর ড্রাম গাছ ফেলে। প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে শুভপুর পৌঁছে ব্রীজ দখল নিতে সকাল ১০ টা বেজে গেলো। ব্রীজ মেরামতের জন্য পাকি সেনা প্রকৌশলী দলকে কাজে লাগিয়ে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফি ৬-৭টা গাড়ী ভর্তি ৫৩ ব্রিগেডের সৈন্য নিয়ে দুপুরে বিকল্প (সম্ভবত অগভীর জল খুঁজে পারাপার) পথে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়। মীরসরাই সীতাকুণ্ডের প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে ছোট কুমিরার মসজিদ্দা হাইস্কুল পৌঁছে বিকেল ৫টায়। বামে ঘুরে ডানে বড় কুমিরার পথে বাঁক নেয়ার সফল যাত্রা ভঙ্গ হলো। কারণ: ১৬শ শতাব্দীর শের শাহ সুরীর মানবিকতা ও একজন স্কুল প্রধান শিক্ষকের ও ছাত্র-জনতা-যোদ্ধাদের দেশপ্রেম।
|
From WEB:
Sher Shah Suri built roads and sarais (rest houses) for travelers and traders. On both sides of the roads he planted trees where passers-by could rest.
The most famous road of Sher Shah is now popularly known as the GT (Grand Trunk) Road. |
Sher Shah Suri |
◼ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হীল মামুন, প্রধান শিক্ষক, ছোট কুমিরার মসজিদ্দা হাইস্কুল, রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, সাহসী দেশপ্রেমিক। ১৬শ শতাব্দীর শের শাহ সুরী পথের দুপাশে গাছ লাগিয়েছিলেন পথচারীদের বিশ্রামের জন্য। ২৬ মার্চ সকালে দেখাগেলো মামুন সাহেবের নির্দেশে এবং সক্রিয় উপস্থিতিতে ছাত্র-জনতা-যোদ্ধারা গোড়া থেকে বিশাল গাছটি কাটা শুরু করেছে, উদ্দেশ্য রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ৫৩ ব্রিগেডের গাড়িবহর আটকাবে। জোরামতলের একজন মুক্তিযোদ্ধা বললেন, লিডার কাঠুরে এখনো বেঁচে আছেন। একটা প্রশ্নের জবাব সংগ্রহ করতে পারিনি। মামুন সাহেব কার নির্দেশে গাছটা কেটেছিলেন? ক্যাপ্টেন রফিক কুমিল্লা থেকে ২৫ মার্চ রাত ছুঁয়ে ২৬ মার্চ মধ্য রাতে রওনা হওয়া ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্ব ৫৩ ব্রিগেডের গাড়িবহরে খবর পেয়েছিলেন ভোর ৪ টায় হালিশহর ইপিআর হেডকোয়ার্টারে বসে। মামুন সাহেব সীতাকুন্ড থানা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তখনও খুব কমই় টেলিফোন ছিল। বিশাল বটগাছ। কেটে উপড়ে ফেলতে দুপুর ১-২টা বেজে গেলো।
◼ বিকেল ৫টা। ৫৩ ব্রিগেডের গাড়িবহর ছোট কুমিরায় বামে ঘুরে সোজা যেতেই দেখতে পেলো রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে ফেলে রাখা বিশাল গাছ যেটা তার সঙ্গের সীমিত সেনাবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সরানো সম্ভব না। গাড়িবহর ঘুরিয়ে কুমিরার মসজিদ্দা হাইস্কুলের সামনে বড় খেলার মাঠে পার্ক করে পরিকল্পনা করতে থাকলেন পরবর্তী পদক্ষেপের।
|
Honorable Headmaster Abdullah Hill Mamun of Masjidda High School, Choto Kumira, Chittagong.png |
Headmaster Abdullah Hill Mamun of Masjidda High School, Choto Kumira, Chittagong |
Masjidda High School, Choto Kumira,
Chittagong
|
Mass people cut down 400 years old big tree to block the kumira road |
◼ ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া গোপন এম্বুশ স্থাপনে ক্যাপ্টেন রফিকের পাঠানো গোলা-বারুদ ও অস্ত্র সহ ৭০জন ইপিআর ও বাঙালি সেনাবাহিনী নিয়ে বিকাল থেকে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। ভি-টাইপ (অথবা ইউ াইপ) এম্বুশ হলো। একটা MMG পোস্ট বসলো জোড়ামতলের পুবের চিরা পাহাড়ের উপর, সঙ্গে রাইফেলধারী ইপিআর-এর দল, দ্বিতীয়টি রাস্তা থেকে মাত্র ১৫ গজ দূরে কামাল ড্রাইভারের "মাইট্টা গুদামে" সঙ্গে রাইফেলধারী ইপিআর-এর দল, তৃতীয়টি ফকির মসজিদের উত্তর পাড়ে, সঙ্গে রাইফেলধারী ইপিআর। এছাড়া ছাত্র-জনতা-যোদ্ধাদের হাতেও অস্ত্র দিয়ে পুরো কুমিরা অঞ্চলকে রণাঙ্গনের আদলে প্রস্তুত রাখে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া। চিরা পাহাড়ের নিচে আরেকটা LMG বসানো হয়েছিল যা প্রথম থেকেই অকেজো ছিল। |
Inside Kamal Drivers Maitta Goodam where Ambush with LMG was set, Joramtol, Kumira, Chittagong |
LMG Post Chira Pahar-East of Joramtal, Kumira Chittagong |
LMG Post-Fakir Masjid, Joramtal, Kumira, Chittagong |
◼ সন্ধে নামার ১৫-২০ মিনিট আগে ৫৩ ব্রিগেডের দলটি মার্চ করে বড় কুমিরা অতিক্রম করার চেষ্টা করে। জোরামতলের কাছাকাছি "মাইট্টা পুল" অতিক্রম করতেই এম্বুশের কার্যকর নিশানায় পড়ে যায়। ঠিক মাগরিবের আজানের মুহুর্তেই চিরা পাহাড় থেকে একটা ফ্লেয়ার পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে আকাশের দিকে উড়ে যায়। পাকি সেনা কিছু বুঝে উঠবার আগেই ভি-টাইপ ৩টি আলাদা উচ্চতার এম্বুশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট তাদের ঘায়েল করে ফেলে। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় শত্রু সেনা নিহতের সংখ্যা ১৪-২০ জন, মারাত্মক আহত ১০০ জন। (ডিসেম্বর-এ আত্মসমর্পনের আগে ২ দিন ধরে মিত্র বাহিনীর সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়। সেখানকার নিহতদের পরিসংখ্যান এখানে আসছে না।) দুপক্ষের গোলাগুলি রাতভর সমানে চলতে থাকে। যুদ্ধে লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহপুর খান (CO 24 FF), একজন লেফটেন্যান্ট, একজন কোম্পানি হাবিলদার মেজর লালা খান নিহত হয়। ছোট কুমিরার মসজিদ্দা হাইস্কুলে পার্ক করা সেনা যানগুলো গুলির সীমানার বাইরে ছিল। এখানে একটা বিতর্কিত তথ্য আছে, ২৬ মার্চ যুদ্ধে ২ টা ফেলে যাওয়া গাড়ি থেকে বাঙালী অস্ত্র পেয়েছিলো। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনার সত্যতা সমর্থন করেছে। অন্যরা বলেছে, তাঁরা কোনো গাড়ি দেখেননি। ২ জনের যুক্তি, পাশেই মাঠে প্রচুর ছনের বোঝা/আটি জমা করা ছিল. ছন ব্যবহার করে RAMP বানিয়ে ফেলে রাখা গাছের উপর দিয়ে ১ টা ট্রাক ও পিকআপ পার করে জোরামতল পর্যন্ত নিয়ে যায় এবং গোলা-গুলি শুরু হওয়া মাত্রই রাস্তার পূর্ব পাশে নিচু জমিতে নামিয়ে গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ২ গাড়ির অস্ত্র যোদ্ধাদের হাতে চলে আসে।
ঘটনার সত্যতা গত রাতে ২৬ মার্চ ২০১৮ সমর্থন করেছেন পাহাড়তলীর (বর্তমানে জোলারহাটেরবাসিন্দা) মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ভাই যিনি ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়াঁর সঙ্গে ভেসপা-এ চড়ে বিকালে কুমিরা পৌঁছেছিলেন। ভেসপা চালিয়েছিল পাহাড়তলীর গ্যারেজের মেকানিক মুক্তিযোদ্ধা শেখ জাবের হোসেন মতি।
|
Maitta Pol near Joramtal Kumira Chittagong |
TB Hospital where Paki Army Brg. Shaffi taken shelter scaping from front fight in Kumira 71 |
Hilltop TB Hospital where Paki Army Brg. Shaffi taken shelter scaping from front fight in Kumira 26 March 71 |
হতাহতের পরিমান আর গুলিবর্ষণের ধারা উপেক্ষা করতে না করতে পেরে শত্রু সেনা ক্রল করে কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বপাশের পাহাড়ের উপর টিবি হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফির পলায়ন দৃশ্য কেমন ছিল, ভাবতে চেষ্টা করি। খন্ড যুদ্ধে ৫৩ ব্রিগেড ঢাকা কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামের সাথে সব যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে।
সারা রাত গুলি চলে, এতে ইপিআর ও বাঙালী সেনাদের রসদ দ্রুত ফুরিয়ে আসতে থাকে। ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া ক্যাপ্টেন রফিকের কাছে দ্রুত রিইনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠায়। সাহায্য পেতে দেরি দেখে এবং ৩টি এম্বুশ স্থান চিহ্নিত হয়ে যাওয়াতে ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের সরিয়ে দেয়া হয় অন্যত্র, কিন্তূ রাতে আশ্রয় নেয়া ৫৩ ব্রিগেডের পাকি বাহিনীর ঘাঁটিতে রূপান্তরিত টিবি হাসপাতালের পাহাড় ঘিরেই ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের মরণপণ দৃঢ় অবস্থান ছিল. শুধু ছিলনা পর্যাপ্ত গোলা-বারুদ-রসদ। ২৬ মার্চ বুদ্ধিমান ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কুমিরা যুদ্ধে শত্রু সেনাদের গুলিতে ১৪ জন বাঙালী যোদ্ধার শহীদ হবার তথ্য অসমর্থিত সূত্রে কিছুদিন আগেই জেনেছি। তবে কোনো ইপিআর বা বাঙালি শহীদ সেনার সমাধি আমি খুঁজে পাইনি।
সাহসিকতা ও সাফল্যের জন্য ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়াকে স্যালুট জানাতেই হয়। |
3 trucks with 70 EPR Jawan parked
inside the forest and spread out
for Ambush under command of
Captain S. A. Bhuiyan
against Paki 53Brigade |
Image taken from west side of Joramtal Canal culvert, Kumira,
Chittagong |
২৬ মার্চ, কয়েকটি প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর:
🔷 ২৯ জানুয়ারী ১৮, মাজার গেটের সামনে কথা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার আবুল কালামের সঙ্গে। প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়াকে দেখেছিলেন মোটর সাইকেল-এ জোড়ামতলের দিকে আসতে। মোটর সাইকেল কোথায় পাবেন? তথ্য হজম করতে পারিনি। ছোট কুমিরের ২ জন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করলাম। তাদের জবাব, কালাম মুক্তিযুদ্ধের সময় কম বয়সের ছিল। ভুল বলেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৮, জোড়ামতলের ইয়াসীন মেম্বার নিশ্চিত করে বলেছেন, ২৬ মার্চ ৭১, বিকালে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়াকে দেখেছিলেন ভেসপায়ে চড়ে জোড়ামতল খাল থেকে বড় কুমিরা স্কুল-এ কয়েকবার টহল দিতে আর চিৎকার করে বলতে-আপনারা সবাই গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দিন। যা পাবেন তাই দিয়ে ব্যারিকেড দিন। ঘটনার সত্যতা সমর্থন করেছেন পাহাড়তলীর (বর্তমানে জোলারহাটেরবাসিন্দা) মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ভাই যিনি ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূইয়াঁর সঙ্গে ভেসপা-এ চড়ে বিকালে কুমিরা পৌঁছেছিলেন।
🔷 সাহসী বুদ্ধিমান সমর বিশারদ ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া ৭০ জন ইপিআর বহনকারী ৩টি ট্রাক জোরামতল খালের কালভার্টের কিছুটা আগেই রাস্তার পশ্চিম পাশে জঙ্গলের ভেতরে লোকচক্ষুর অন্তরালে পার্কিং করেই এম্বুশ ও যুদ্ধের জন্য দ্রুত পাহাড় ও সমুদ্রের পার ঘেঁষে গ্রামের ভেতর অবস্থানে পাঠিয়ে দেন। সেই কারণে জোরামতল-কুমিরার রাস্তায় ইউনিফর্ম পরা ইপিআর জোয়ানদের মার্চ করে যেতে দেখেনি।
(ট্রাকের সংখ্যা ও পৌঁছাবার সময় নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত-সংগৃহিত তথ্যে ট্রাকের সংখ্যা ২-৩ ও সময় দুপুর ২টা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।)
🔷 একটা MMG পোস্ট ছিল চিরা পাহাড়ে, এম্বুশের সময় মশিন গানটা সবচেয়ে কার্যকর ছিল। ধারণা মেশিনগানটা সুবেদার মুসা চালাচ্ছিলেন। একটা হেভি মেশিনগান ট্রাকেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল যেটা চালাবার মতো যোদ্ধা ছিল না। ়। |
◼ ২৭ মার্চ ১৯৭১: কুমিরা।
সকাল ৮টা (সময় নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত)। টিবি হাসপাতাল পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত মর্টারের শেল বিস্ফোরিত হয় জোড়ামতলের পশ্চিমের চৌরাস্তায়। আহত হয় ৬-৭ জন গ্রামবাসী। ২৬ মার্চ রাতে আশ্রয় নেয়া ৫৩ ব্রিগেডের পাকি বাহিনী টিবি হাসপাতালকে ঘাঁটি বানিয়ে সকাল থেকে অভিযান চালাতে চেষ্টা করে। সারারাত বিরামহীন গুলিবিনিময়ের ভয়াৱহতায় যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশের গ্রামবাসী মধ্যরাতের পরথেকেই নিরাপদে সরে যেতে থাকে। ডানপিটে কিশোর যোদ্ধারা (বয়স ১০-১৫)পালিয়ে যায়নি, যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে আগ্রহী হয়ে লুকিয়ে ছিল ও যুদ্ধরত ইপিআর ও বাঙালী সেনাদের খাবার ও ছোট ছোট কাজগুলো করে নিজেদের ভাগ্যবান মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শুরু করেছিল, ফলতঃ ২৮ মার্চ ৫৩ ব্রিগেড চট্টগ্রামমুখী হওয়ার পর ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যায়। কিছু কিশোর স্থানীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
২৭ মার্চে ঘটে যাওয়া ঘটনা লিখতে গিয়ে আমার তথ্য সংগ্রহে হোঁচট খেতে হয়েছে। ওয়েবসাইট ছাড়াও ছোট ও বড় কুমিরার অনেকের কাছেই শুনেছি, শত্রুপক্ষের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহপুর খান (24 FF), একজন লেফটেন্যান্ট, একজন কোম্পানি হাবিলদার মেজর লালা খান নিহত হয় ২৬ মার্চের এম্বুশ ও সম্মুখ যুদ্ধে। আমি যখন চতুর্থ বারের মতো কুমিরা যুদ্ধের তথ্য সংগ্রহে যাই তখন স্বন্দীপ যাবার নৌঘাট "ঘাটঘর" যেতে হয়েছিল। চমকে যাবার মতো ঘটনা শুনে ইপিআর যোদ্ধাদের সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের ব্যাপারটা একটা অন্যধরণের গৌরববোধে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম কিন্তূ তারচেয়েও বেশি মাথা ঘুরে গেলো ২৬ মার্চ নিহত লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহপুর খান ২৭ মার্চ সকালে কিভাবে বেঁচে উঠে একটা ট্রুপ নিয়ে অভিযানে বের হলেন??? মুখে মুখে ছড়িয়ে থাকা ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, কারণ সবাই প্রাণ ভয়ে দূরগ্রামে চলে গেছে পরিবার বাঁচাতে। যারা কোথাও যেতে পারেনি, সেইসব ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মারণাস্ত্র রাইফেলের ব্যাপারে তেমন কিছু বুঝতো না, দূর থেকে পাকি শত্রু সেনাদের অনুসরণ করছিল। কিশোর-যুবকরা দা-ছুরি, লাঠি এবং রেল লাইন থেকে সংগ্রহ করা পাথর বস্তায় ভরে এনে বহনযোগ্য পরিমান সঙ্গে নিয়ে ঘুরছিল শত্রু-বধ করার প্রতিজ্ঞায়।
সকালেই টিবি হাসপাতাল পাহাড় থেকে বাইনোকুলার দিয়ে পশ্চিমের ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টি রেখে মাঝে মাঝে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছিলো পাকি শত্রু সেনা। সাধারণ গ্রামবাসী আহত-নিহত হচ্ছিলো। সকাল ৯টা (আনুমানিক), লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহপুর খানকে দেখা গেল ১ ট্রুপ সৈন্য নিয়ে IWTA বিল্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছে। (তখন IWTA বিল্ডিং ছিল বর্তমান ঘাটঘর থেকে দেড় মাইল পশ্চিমে গ্রাম সংলগ্ন স্থল অংশে। পরে কোনো একসময় IWTA বিল্ডিং সহ গ্রামটি সমুদ্রে তলিয়ে যায়)।
|
27 March Lt. Col. Shahpur Khan (CO 24 FF) marched towards IWTA building and killed by EPR ambush (???) |
View from TB Hospital hilltop to sea (west side) where Paki Army Brg. Shaffi has taken shelter till 53 Brigade convoy reached, crossing Shuvopur bridge
|
ফকির মসজিদের উত্তর পাড়ের LMG পোস্টের ২ জন নির্ভীক ইপিআর যোদ্ধা ভোরের আগেই (এটা আমার ধারণা, কারণ IWTA বিল্ডিঙের সবচেয়ে কাছের LMG পোস্ট ছিল ফকির মসজিদের) IWTA বিল্ডিঙের ছাদে লুকিয়ে থাকে। ট্রুপ IWTA বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি আসতেই LMG দিয়ে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে এবং গুলি ফুরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যায়। একজন লেফটেনেন্ট সেখানেই নিহত হয় (মতান্তরে মারাত্মক ভাবে আহত হয় ২ জন পাকি সেনা অফিসার এবং টিবি হাসপাতালে বহন করে নেয়ার পর সন্ধ্যায় টিবি হাসপাতালে মারা যায়). পাকি সৈনিক কতজন মারা যায় তার স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন পাকি সৈনিক IWTA বিল্ডিঙের ছাদে উঠে বেয়নেটদিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ২ জন নির্ভীক ইপিআর যোদ্ধাকে মেরে ছাদ থেকে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দায়ে। ২ জন বীর ইপিআর যোদ্ধার নাম অথবা কোথায় সমাধী, চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। (এই তথ্য অসমর্থিত সূত্রে পাওয়া)
মুহূর্তেই গ্রামবাসী লাঠি, চুরি, দা, কুড়াল, পাথর নিয়ে পাকি বাহিনীকে ধাওয়া করে। পাকি বাহিনী রাস্তা হারিয়ে উত্তরে মসজিদ্দার দিকে পালাতে থাকে। ছাত্র-জনতা-যোদ্ধাদের ভয় দেখাবার জন্য একটা পশুকে গুলি করে মেরে দেখায়। একজন ছাত্রকেও গুলি করে। যতদূর জেনেছি, পাকি বাহিনীর ছোট্ট দলটিকে জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলে।
◼ ২৬ মার্চ এম্বুশ ও সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত ৫৩ ব্রিগেডের অগ্রগামী কলাম ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সাথে সব যোগাযোগ হারায়। কলামটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে পারে মনে করে উদ্বিগ্ন জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম সকালে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করে লেফটেনেন্ট কর্নেল ফাতেমীর সঙ্গে কথা বলে ফেরার পথে ৫৩ ব্রিগেডের হারিয়ে যাওয়া কলামটির খোঁজে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলে। কুমিরার কাছাকাছি পরিষ্কার দৃষ্টিগোচরের জন্য হেলিকপ্টার কিছুটা নিচু দিয়ে উড়তে থাকে। চিরা পাহাড়ের এম্বুশ থেকে ছোঁড়া হালকা অস্ত্রের গুলি হেলিকপ্টারে আঘাত করে। জিওসি খাদিম ঢাকায় ফিরে যায়।
◼ এদিকে শুভপুর থেকে পাকি সেনারা কুমিরা পৌঁছে যায় (পৌঁছাবার নির্দিষ্ট সময় অজানা, দুপুরের পর হতে পারে)। ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফি পুরো দলটির নেতৃত্ব ভার নিয়ে পুনঃবিন্যাস করে একটি কলাম পাঠাবার চেষ্টা করে টিবি হাসপাতালের পুর্বদিকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের ২০ বালুচ এলাকায়। কিন্তূ এম্বুশে পড়ে কলামটি অভিযান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
◼ ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া শহরে চলে আসেন সামরিক সরবরাহ পাবার জন্য। কুমিরার ইপিআর ট্রুপস গোলাবারুদ শূন্য হয়ে পড়ে এবং একটা অংশ পিছুহটে ভাটিয়ারীতে অবস্থান নেয়।
◼ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের শতাধিক সৈন্যের দল সীতাকুন্ডের নায়েক শফী সহ পাহাড় ডিঙিয়ে ২৬ মার্চ নাসিরাবাদ পলিটেকনিকের নীচতলায় সকাল থেকে লুকিয়ে ষোলশহরে অবস্থানরত মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। ২৭ মার্চ দলটি অচেনা পাহাড়সারি পার হয়ে কৈবল্যধাম পৌঁছে দুপুরের পর এবং সেখান থেকে কাছেই কাট্টলী চলে যায় যেখানে বিকালে দেখা হয় ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে। একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে ৩ ট্রাক EBRC, EPR ও কিছু পুলিশ বাহিনী নিয়ে চলে যে কুমিরার পাক্কা মসজিদে। দ্রুত রাস্তার দুপাশে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে এবং আড়ালে অস্ত্র তাক করে ৫৩ ব্রিগেডের পুরো দলটিকে প্রতিরোধের প্রত্যয়ে অপেক্ষমান থাকে। স্থানীয় ছাত্র-জনতা-যোদ্ধা হাতের কাছে যা পেয়েছিলো তাই নিয়ে বাঙালী বাহিনীর পাশেই অবস্থান নেয়। (এই বক্তব্য সীতাকুন্ডের মুক্তিযোদ্ধা ও EBRCর ট্রেইনার নায়েক শফীর)
◼ ২৮ মার্চ ১৯৭১: কুমিরা।
ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফি নিজেই ৫৩ ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে সকাল ৮টায় এলোপাথারী গুলি ছুঁড়ে অগ্রসর হতে থাকে। ৩ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর ভাটিয়ারীর ইপিআর ট্রুপ ফৌজদেরহাটের ইপিআর প্লাটুনের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে কিন্তূ আধ ঘন্টার বেশী অবস্থান ধরে রাখতে না পেরে পাহাড়তলী হাজীক্যাম্পে চলে যায়। বিকালের মধ্যেই ব্রিগেডিয়ার শাফির বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়েই পাহাড়তলীর ইস্পাহানি কটন মিল দখল করে নেয়।
|
Mass Grave of 10-11 Shahid Freedom Fighters near Pakka Masjid, Kumira, Chittagong.01 |
Mass Grave of 10-11 Shahid Freedom Fighters near Pakka Masjid, Kumira, Chittagong.02 |
Mass Grave of 10-11 Shahid Freedom Fighters near Pakka Masjid, Kumira, Chittagong.03
|
|
Grave of Shahid Kh. Nur Mostafa Kamal Pasha, Lance Nayek, EBR, Chittagong at TB Hill, Kumira, Ctg.01 |
Grave of Shahid Kh. Nur Mostafa Kamal Pasha, Lance Nayek, EBR, Chittagong at TB Hill, Kumira, Ctg.02 |
ব্রিগেডিয়ার শাফির বাহিনী কুমিরার(ঘোড়ামারা)পাক্কা মসজিদ অতিক্রমের সময় ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়ার দলের আক্রমণের মুখে পড়ে। রাস্তার দুপাশেই এম্বুশ ছিল। আমি দুজনের হাতে কি অস্ত্র ছিল জিজ্ঞেস করেছিলাম নায়েক শফীকে। ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া চাইনিজ সাব-মেশিনগান নিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে ও নায়েক শফী রাস্তার পূর্বপাশে ট্রেঞ্চে কালাশনিকভ রাশিয়ান রাইফেল হাতে যেটা দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করছিলেন পাশে ছিল ২ জন যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ১০ জন বেসামরিক ছাত্র-জনতা শহীদ, একজন ইপিআর যোদ্ধা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ব্রাশ ফায়ার করতে করতে শত্রু সেনার গুলিতে শহীদ হন। তার সঙ্গী যোদ্ধা সাবধান করছিলেন, শত্রু কাছে চলে এসেছে, শোনেননি বন্ধুর কথা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ করলেন। নির্ভীক ইপিআর যোদ্ধার নাম জানতে পারিনি। ইতিহাস বলার বয়োজোষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা স্ট্রোক করেছেন এবং শহরের হাসপাতালে। |
✽ ✽ টুকরো টুকরো গল্প:
✽ ২৬ মার্চ ৭১, ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হতেই মিরেরসরাইর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন নিজামী (এলাকাবাসী সহ)৩জন রাইফেলধারীকে দেখলো হেঁটে উত্তর দিকে চলে যাচ্ছে। পরনে হাফপ্যান্ট, লুঙ্গি, গেঞ্জি। কিছুই বলতে চায়নি। অনেক অনুরোধের পর বললো - চিটাগাং ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সেনা ও পরিবার হত্যাকাণ্ডের কথা। পালিয়ে এসেছে সীতাকুন্ড পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন নিজামীকে জিজ্ঞেস করলাম, কাপড় দিয়েছেন? খেতে দিয়েছিলেন?? বললেন, না, ওরা কিছুই গ্রহণ করেনি। হেটে চলে গেল উত্তরের অজানা গন্তব্যে। আমি গতকাল সকালে জেনেছি। মনের কোনে কষ্ট ...... নাহ, দুঃখ বিলাসীতা আমায় সাজে না।
✽ এ লজ্জা রাখি কোথায়? কুমিরা ঘুরছি। কোনো যুদ্ধে শহীদের সমাধির স্মৃতি চিহ্ন পেলাম না। কুমিরা টিবি হাসপাতাল থেকে নামার সময় পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে বসা গ্রাম্য মহিলাকে আমরা জিজ্ঞেস করলাম-এখানে কি কোনো মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে? বসন্তে লাল ফুল ফোটা বড় গাছ দেখিয়ে বললেন-এই গাছের নিচেই কবর আছে। আমরা খুবই ক্লান্ত ছিলাম। হেঁটে গিয়ে সমাধি দেখা সম্ভব ছিল না। গাছটা বা মহিলার ছবি তোলা হলো না। আমার মোবাইল ক্যামের সমস্যা ছিল। তবে পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত একটা ছবি তুলেছিলেন, রুস্তম আলী বীর প্রতীক ভাই দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর ডান ঘাড়ের পেছনে গাছটা দৃশ্যমান। কিছুটা ঝাপসা।
২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: আবারো গেলাম সেই লাল লাল ফুলে ছেয়ে থাকা গাছটির নিচে। ছবি তুললাম। শহীদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েকের শুধু নাম আছে। মৃত্যুর সময় তারিখ কিছুই নেই, কেয়ারটেকার কিছুই বলতে পারলো না। শুধু এটুকু বললো, পাহাড়ের মাঝে আটকে পরে ২ দিন না খেয়ে ছিলেন শহীদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। সম্ভবতঃ ২৮ মার্চ ৫৩ ব্রিগেড নেমে যাওয়ার সময় গুলি করেছে।
✽ ২৮ মার্চ, পাক্কা মসজিদ, কলেজ ছাত্র, পাথর হাতে পাকি সেনাকে রুখে দাঁড়ালো। ছুঁড়ে মারতে গিয়েই গুলি খেলো। নির্ভীক শহীদের রক্তে দেশের মাটি ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। নামটা মনে রাখতে পারিনি। হয়তো আবারো যাবো। সেখানেই LMG চালাতে চালাতে প্রাণ দিলো একজন EPR জোয়ান। পালাবার পথ ছিল, পালায়নি।
✽ ২৫ মার্চের অনেক আগে থেকেই পাহাড়তলী ঝর্ণাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা ফাহিম উদ্দিন ভাই চিটাগাং মেডিক্যালে কলেজে বন্ধুদের নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ২৮ মার্চ সকালে চট্টেশ্বরী পৌঁছাবার পর ২ জন ইপিআর সদস্য জানালো, কুমিরাতে যুদ্ধরত বাঙালীদের খাবার পৌঁছাতে হবে। ভাগ্য ভালো, এক বিদেশীর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিলো, তাদের (বিদেশীদের) কি হবে? ফাহিম ভাই ও তার একজন বন্ধু কিছুটা আশ্বাস দিলো। পরে সেই বিদেশী তাঁর অফিসের নতুন কেনা টয়োটা জীপ্ বেবহার করতে দিলো যেটা মাত্র ১৬ মাইল চলেছে। ২ জন ইপিআর, সঙ্গে খাবার, ফাহিম ভাই ও তার বন্ধু দুপুর ১২টার আগে বা পরে ফৌজদারহাট পার হয়ে ভাটিয়ারীর দিকে যেতেই দেখতে পেল ৫৩ ব্রিগেড পাকি বাহিনী এলোপাথাড়ি গোলা-গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তীব্র বেগে ধেঁয়ে আসছে।ফাহিম বন্ধু জীপ্ ব্যাক গিয়ার্-এ দিয়ে গাড়ী ঘোরাতে চেষ্টা করতে গিয়ে একটা গুলি স্টিয়ারিং হুইলে লাগতেই জীপ্ কয়েকবার উল্টে পাশের নিচু জমিতে ছিটকে পড়লো। কিছুটা আহত হলেও কেউই নিহত হননি। সেখান থেকে বাসায় না ফিরে বর্ডার পার হয়ে ভারতে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিতে। ঈদগাহ কাঁচা রাস্তার মাথায় চট্টগ্রাম শহরের প্রথম যে এম্বুশ ও সম্মুখ যুদ্ধ হয় সেটা প্রায় সব লেখকই ২৭ মার্চ উল্লেখ করেছেন। কিন্তূ ঘটনা ঘটেছিলো ২৮ মার্চ বিকেল ৩-৪টার মধ্যে। আমি ২ মাসে অনেক সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি, তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ফাহিম ভাই একজন।
|
|
|
|